চন্দ্রযান তিন এর সফলতায় ভারত বর্ষ অর্থনীতি সহ কোন কোন দিকে কিভাবে উপকৃত হবে সেই বিষয়ে আমাদের জানালেন চন্দ্রযান তিনের জ্বালানি গবেষক সুহাস মুখার্জি

আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে কোনো অন্তরীক্ষ মিশন যখন উৎক্ষেপণ হয় সেটা কি আদৌ কোনো সাধারণ মানুষের কাজে লাগে। এমন একটা প্রশ্ন অনেকের মুখে মুখে শোনা যায়। তাই জেনে রাখা দরকার, চন্দ্র অভিযান বা মঙ্গল অভিযান যে প্রযুক্তি গুলি ব্যাবহার করা হয় সেগুলি অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এর ও কাজে লাগে। যেমন যদি বলা যায়, কৃত্রিম উপগ্রহের যে ছোট্ট ভালভ দিয়ে তার ওরিয়েন্টেশন কে কন্ট্রোল করা হয়, সেই ভালভ এর টেকনোলজি দ্বারা আবার মানুষের হৃদয়ের কৃত্রিম ভালভ তৈরি করার হয়।সাম্প্রতিক কালে এমনি একটা প্রযুক্তি বিক্রম সারাভাই অন্তরীক্ষ কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে, এবং যেটি শ্রী চিত্রা থিরুনাল বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট কে দেওয়া হয়েছে। এরম অসংখ্য টেকনোলজি দ্বারা ভারতের মানুষ উপকৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এবার যদি ধরা যায় গগন যান এর যে কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরির যন্ত্র সেই যন্ত্রই আবার কৃত্রিম অক্সিজেন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল করোনা কালে। সেই প্রযুক্তি ও বিক্রম সারাভাই স্পেস কেন্দ্রে তৈরির পর সেটিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে ট্রান্সফার করা হয় সল্প দামে অক্সিজেন জেনারেটর বানানোর জন্য। এবার আসি কমার্শিয়াল দিকে, ভারতের মঙ্গল অভিযান বা চন্দ্র অভিযান সফল হওয়ার জন্যে ভারতের প্রযুক্তি র ওপর পুরো বিশ্ব এখন বিশ্বাস করছে। যার জন্যে অন্যান্য দেশ গুলি তারা নিজেদের স্যাটেলাইট ভারতের উৎক্ষেপণ জানে পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর আগেও ভারত অনেক বিদেশি উপগ্রহ পাঠিয়েছে, যেটা র জন্য ভারত সরকার এর কোষাগারে মুদ্রা স্ফীতি হচ্ছে প্রায় তিনগুণ। সেই অর্থই আবার ভারতবাসীর development এর কাজে লাগছে। আর শেষ হলো, বিজ্ঞান বা অজানাকে জানার মানুষের ইচ্ছে,সেখান থেকে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে,যেমন চন্দ্র পৃষ্টে জলের অস্তিত্ব, চন্দ্রের যে রক বা পাথরের স্ট্রাকচার সেটা সমন্ধে জ্ঞান, চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সমন্ধে জ্ঞান, আরো চাঁদে হিলিয়াম গ্যাসের অস্তিত্ব, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি র যে তত্ব টা সমন্ধে ও অনেক কিছু জানা সম্ভব।আর অন্যান্য স্যাটেলাইট গুলি যেমন নেভিগেশন, রিমোট সেন্সিং, কমিউনিকেশন, এসব স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত পরিষেবা পাই। যেমন হলো আবহাওয়া সমন্ধে পূর্বাভাস, দুর্যোগে পূর্বাভাস, ভিপি ন এটি এম সার্ভিস, টেলিমেডিসিন, টেলিডাকেশন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, হাই ইন্টারনেট, ম্যাপ, এই গুলি আমরা প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করে থাকি কিন্তু, এগুলিও যে স্যাটেলাইট দ্বারা কন্ট্রোল সেটা অনেকেরই জানা নেই।
এবার আসি সোজা সুজি চন্দ্রযান ৩ এর কথায়। প্রথমে আমি তুলে ধরতে চাইবো এই মিশন এর জন্য সাধারণ ভারতীয়র কি করে উপকৃত হবে ? এই পৃথিবি টা যে পুরোপুরি অর্থনীতি দ্বারা চালিত হচ্ছে সেই অর্থনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে কিন্তু মহাকাশ ব্যবসা রয়েছে। এই অতি দ্রুত সমপ্রচারণের আর যোগাযোগের যুগে যেখানে গুগল এর পেজ খুলতে দুই সেকেন্ড দেরি হলে মানুষ তার ইন্টারনেট প্রোভাইডার দের ফোন করে কটু কথা শোনাতে ছাড়েন না। সেই যুগে মানুষ চায় আরও দ্রুত ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যাবস্থা প্রশ্ন হলো সেই ব্যাবস্থা গুলো কি করে চলে। কোন মেশিনে কন্ট্রোল হয় এসব সমন্ধে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই বললেই চলে। ভারতের কাছে কি সেই প্রযুক্তি আছে । তবে আজ থাকে ৩০ বা ২০ বছর আগে কিন্তু ছিলনা। তবে তা যদি থাকে তাহলে চাঁদে পাঠালো কেনো, সেটাকেই তো আগে আরো পোক্ত করা যেত জা আরো সাধারণ মানুষ কে আরো বেশি পরিষেবা দিত। এখানেই আরো একটা গভীর প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। সেটা হলো অর্থনীতি এত কোটি দেশের মানুষ কে পরিষেবা দিতে হলে প্রচুর কমিউনিকেশন ডিভাইস স্পেস, ই রকেট এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে। সেটাকে সম্ভব করার দুটো উপায় আছে একটি হলো আমাদের দেশ আরো রকেট লঞ্চ করবে,এবং এই ডিভাইস গুলোকে মহাকাশে স্থাপন করার জন্যে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই ডিভাইস গুলোকে অন্য দেশের মাধ্যমে পাঠানো যেতে পরে। যেসব দেশ আগে অনকেবার মঙ্গল বা চাঁদে অবতরণ করেছে বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে। সেই রকম দেশ এর সংখ্যা কম আছে। এবং আমরা সেই সমস্ত দেশ কেই বিশ্বাস করবো উপগ্রহ স্থাপন এর জন্যে যারা এরকম অনেক জটিল অন্তরীক্ষ মিশন সফলতা লাভ করেছে। ভারত নিজেকে সেই জায়গায় প্রতিস্থাপন করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের এই সমস্ত জটিল মিশন যেমন মঙ্গলযান , ছন্দ্রয়ান, গগন যান , আদিত্য মিশন করার কারণ হলো, নিজেদের এমন একটা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাদের ওপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশ গুলো এই বিশ্বাস করতে পারে , যে ভারত হলো সেই দেশ যে সবচে কম খরচে তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ কে সফল ভাবে কক্ষে স্থাপন করতে পারে। ভারতবর্ষ এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ টির কাছাকাছি বিদেশি উপগ্রহ কে সফলতার সাথে পৃথিবী কক্ষে স্থাপন করেছে। আরেকটা কথা বলি ভারতবর্ষ এই স্যাটেলাইট গুলোকে উৎক্ষেপণ করতে প্রতি কেজি বাবদ প্রায় ৩২ থেকে ৩৪ লক্ষ টাকা দাবি করে। এই উপগ্রহ গুলিকে মহাকাশে পাঠাতে এর থেকে ৪ গুন কম টাকা খরচ হয়। তাহলে এক কেজি স্যাটেলাইট লঞ্চ করে ভারত প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আয় করে। আর সেখানে প্রতিটি রকেটে প্রায় ৪০০০ কেজি এর স্যাটেলাইট পাঠানো হয়। তাহলে আপনারা নিজেরাই আয়ের পরিমাণ টা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়। আর এই আয় কোথায় যায়? এই আয় যায় সরকারের খাতায় যা দিয়ে এই দেশে ১৪০ কোটি মানুষের জন্যে রোড, হসপিটাল, স্কুল, উচ্চশিক্ষা, মেডিকেল, ডিফেন্স, সহ সব কিছু তে বিনিয়োগ হয়। এই মিশন গুলির বৈজ্ঞানিক গুরত্বও অপরিসীম। তবে এই কমপ্লেক্স অন্তরীক্ষ মিশন গুলিকে একটি অসাধারণ বিনিয়োগ ও বলতে পারেন। যে বিনিয়োগে থাকে আয় চার গুণের ও বেশি। আরেকটি বিশেষ দিকে আমি আলোকপাত করবো সেটা হলো এই মিশন গুলো কে দেখে অনেক নতুন প্রাইভেট বিজনেস ও স্টার্টআপ ও শুরু হচ্ছে যেগুলি পরবর্তী কালে ভারত বর্ষের জনগণের জন্যে চাকরির অবকাশ আরো দশ গুণ বাড়িয়ে দেবে। ভারতের এই অন্তরীক্ষ মিশন গুলোই দেখবেন আর কয়েকবছর পরে ভারত কে ৫ ট্রিলিয়ন ইকোনমি এর একটা দেশ হিসেবে পৃথিবী তে উপস্থাপন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
পরিশেষে বলি, নাসা, ই এস এ, রস্কষ্মস, এই সব সংস্থা এই মিশন টিকে নিজের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে না দেখে মানব জাতির পরিপ্রেক্ষিতে দেখছে বলেই মনে হয়। কারণ এই সংস্থা গুলি পূর্বেও এরম ধরনের মিশন করেছে। তাই তারা জানেন এইধরনের মিশন দেশের সীমার উর্ধ্বে। তবে এখন আরো দেশ ভারতের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে আরো অনেক ইনটারপ্লানেটারি মিশন করার জন্য আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।